লোকাল এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
লোকাল এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, লোকাল এনেসথেসিয়া হল শরীরের একটি নির্দিষ্ট ছোট অংশকে অসার করার জন্য ব্যবহৃত এক প্রকার ওষুধ।যার ফলে ওই অংশে ব্যথা বা অনুভূতি থাকে না, কিন্তু রোগী সম্পূর্ণ সজাগ থাকে। সাধারণত ছোটখাটো অপারেশনের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার
করা হয়ে থাকে। এনেসথেসিয়া করার পর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় রক্তপাত, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি। আজকে আমরা জানবো লোকাল এনেসথেসিয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে, তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমাদের লিখা আটিকেলটি পড়ুন এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিন।
পেজ সূচিপত্রঃ লোকাল এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- লোকাল এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- লোকাল এনেসথেসিয়া এলার্জির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- লোকাল এনেসথেসিয়া হৃদপিন্ডের উপর প্রভাব
- ইনজেকশনের স্থানে এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- লোকাল এনেসথেসিয়া দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- স্নায়ুতন্ত্রের উপর এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- লোকাল এনেসথেসিয়া ফলে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- মাথা ঘোরা ও ক্লান্তি অনুভব লোকাল এনেসথেসিয়া
- ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য সতর্কতা লোকাল এনেসথেসিয়া
- শেষ কথাঃ লোকাল এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
লোকাল এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
লোকাল এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, লোকাল এনেসথেসিয়া হলো এক ধরনের ঔষধ যার শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশকে সাময়িকভাবে অবুঝ বা অনুভূতিহীন করে তোলে। যাতে সে অংশের কোন প্রক্রিয়া বা অস্ত্র পাচার করা যায় এবং রোগী ব্যথা অনুভব না করে। এটি সাধারণত দাঁতের চিকিৎসা, বা নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যথা ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত হয়। লোকাল এনেসথেসিয়া ও সাধারণ নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়। তবুও এটি ব্যবহারের পর দেখা দিতে পারে। এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো সাধারণত হালকা এবং ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া প্রভাব বেশি হয়।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
- সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ ইনজেকশনে সাইটে ব্যথা বা অস্বস্তি, ফোলা ভাব বা লালচে ভাব, ত্বকের বিবর্তন, সাময়িক দুর্বলতা।
- কম সাধারণ বা গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ এলার্জিক প্রতিক্রিয়া, সিস্টেমিক প্রভাব, স্নায়বিক জটিলতা, ইনফেকশন।
লোকাল এনেসথেসিয়া এলার্জির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- এলার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোকাল এনেসথেসিয়া মূল উপাদান এর প্রতি সরাসরি এলার্জি বিরোধ। এর পরিবর্তে এনেসথেসিয়া সাথে ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদান বা প্রিজারভেটিভস এর প্রতি অ্যালার্জি দেখা যাওয়া সম্ভাবনা বেশি।
- এলার্জিক প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ সমূহঃ হালকা অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া ত্বক লালচে, চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি বা ছোপ ছোপ দাগ দেখা দিতে পারে।
- গুরুতর এলার্জির প্রতিক্রিয়াঃ এটি একটি জীবন হুমকি পূর্ণ জরুরী অবস্থা এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন। গুরুতর এলার্জির প্রতিক্রিয়া লক্ষণ গুলি হল, শ্বাসকষ্ট, গলা বা শ্বাসনালী ফুলে যাওয়ার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। রক্তচাপ কমে যাওয়া রক্তচাপ বিপদজনকভাবে কমে যেতে পারে যার ফলে মাথা ঘোরা দুর্বলতা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া দেখা দিতে পারে।
লোকাল এনেসথেসিয়া হৃদপিন্ডের উপর প্রভাব
- রক্ত প্রবাহে অত্যাধিক শোষণঃ যদি ঔষধ ভুলবশত সরাসরি রক্তনালিতে ইনজেক্ট করা হয় বা খুব দ্রুত বা অত্যাধিক পরিমাণ করা হয় তবে এটি দ্রুত রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করতে পারে।
- মানসিক চাপ এবং উদ্বেগঃ এনেসথেসিয়া নেওয়ার আগে বা চিকিৎসা চলাকালীন রোগী যদি খুব বেশি উদ্বিগ্ন বা ভীত হন তাহলে তাদের শরীরে প্রাকৃতিক নিঃসরণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত হৃদপিন্ডের গতি ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। যা হৃদপিণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকে হৃদরোগের সমস্যা আছে।
- হৃদপিন্ডের উপর সম্ভাব্য প্রভাব এবং লক্ষণসমূহঃ বুক ধরফর করা, রক্তচাপের পরিবর্তন, বুক ব্যথা, অনিয়মিত স্পন্দন।
ইনজেকশনের স্থানে এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- সাধারণ স্থানীয় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়ঃ ব্যথা বা অস্বস্তি, ফোলা ভাব, চুলকানি, রক্তপাত বা কালশিরে, ত্বকের বিবর্ণতা, স্পর্শকাতরতা।
- কম সাধারণ বা সম্ভাব্য গুরুতর স্থানীয় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ স্থানীয় ইনফেকশন, স্নায়ুর ক্ষতি, হেমাটোপা, স্থানীয় অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া।
- কখন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেনঃ যদি ইনজেকশন নেওয়ার পর নিম্নলিখিত কোন লক্ষণ দেখা যায় তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। ইনজেকশন সাইটে তীব্র ব্যথা যা সময়ের সাথে বাড়ছে। তীব্র লালচে ভাব, উষ্ণতা বা পুচ বের হওয়া যা সংক্রমণের লক্ষণ।
লোকাল এনেসথেসিয়া দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- স্নায়ুর ক্ষতিঃ এটি দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে পরিচিত কারণ। ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময় সুদ সরাসরি একটি স্নায়ুর আঘাত করলে যা স্নায়ুর আশেপাশে হেপাটোমা তৈরি হয়ে স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করলে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।
- সংক্রমণঃ যদি ইনজেকশনের স্থানে সংক্রমণ হয় এবং সেটি যথাযথ চিকিৎসা না হয়, তবেই এটি দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা যেমন ফোঁড়া বা সিস্ট সৃষ্টি করতে পারে।
- ক্রমাগত প্রদাহঃ ইনজেকশন সাইটে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ বা বিরল ক্ষেত্রে এলার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণে টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে বা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করে।
স্নায়ুতন্ত্রের উপর এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- সিস্টেমিক শোষণঃ যদি লোকাল ঔষধ ভুলবশত একটি বড় রক্তনালি তে ইনজেক্ট করা হয় বা খুব দ্রুত বা অত্যাধিক পরিমাণে ইনজ্যাক্ট করা হয়, তবে এটি দ্রুত রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে।
- রক্ত মস্তিষ্কে প্রতিবন্ধক অতিক্রমঃ লোকাল ঔষধ গুলো সাধারণত লিপিড দ্রবণীয় হয়। যার কারণে তা রক্ত মস্তিষ্কে প্রতিবন্ধক অতিক্রম করে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। উচ্চমাত্রায় প্রবেশ করলে এটি বিষাক্ততা সৃষ্টি করে।
- রোগীর সংবেদনশীলতাঃ কিছু রোগী যেমন ছোট শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, বা যাদের লিভার কিডনির কার্যকারিতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে ঔষধের মেটাবলিজম ধীর হতে পারে, ফলে রক্তে ওষুধের মাত্রা বেশি সময় ধরে বেশি থাকতে পারে।
লোকাল এনেসথেসিয়া ফলে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- গুরুতর হেমাটোমাঃ ইনজেকশনের সময় যদি একটি বড় রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে ত্বকের নিচে প্রচুর পরিমাণে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে যা একটি বড় হেমাটোমা তৈরি করে।
- সংক্রমণঃ যদি ইনজেকশন এর সাইডে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায় তাহলে সেই স্থানে জমে ফোলা ভাব হতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহঃ কিছু বিরল ক্ষেত্রে টিস্যুর প্রতি ঔষধের প্রতিক্রিয়া বা ইঞ্জেকশন এর কারণে সৃষ্টি আঘাতের কারণে দীর্ঘ স্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। এই দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের ফলে স্থানীয় টিস্যুতে দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল এবং ব্যথা হতে পারে।
মাথা ঘোরা ও ক্লান্তি অনুভব লোকাল এনেসথেসিয়া
- সিস্টেমিক শোষণঃ যদি ও লোকাল এনেসথেসিয়া মূলত স্থায়ীভাবে কাজ করে। একটি ছোট পরিমান ঔষধ রক্ত প্রবাহের শোষিত হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কেও পৌঁছাতে পারে।
- রক্ত চাপের পরিবর্তনঃ কিছু লোকাল বিশেষ করে যদি এতে এপিনেপ্রিন থাকে তাহলে রক্তচাপের সাময়িক পরিবর্তন ঘটতে পারে। রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে মাথা ঘুরা বা হালকা মাথা ব্যাথা অনুভব হতে পারে।
- রক্তের শর্করার মাত্রাঃ দীর্ঘক্ষন উপবাসে থাকলে বা ডাইবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমে গেলে মাথা ঘোরা এবং ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। এটি সরাসরি এনেসথেসিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না হলেও চিকিৎসা পদ্ধতির সময় এটি একটি সংশ্লিষ্ট সমস্যা হতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য সতর্কতা লোকাল এনেসথেসিয়া
- যাদের লিভার বা কিডনির সমস্যা আছেঃ লিভার বা কিডনি হলো শরীরে সেই সব অঙ্গ যা ঔষধ কে প্রক্রিয়াজাত করে এবং শরীর থেকে বের করে দেয়। এই অঙ্গ গুলোর কার্যকারিতা দুর্বল হলে তোর শরীরের বেশি সময় ধরে থাকতে পারে এবং রক্তের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে বিষাক্ততা সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে ঔষধের ডোজ কমানো এবং ভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।
- স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিঃ তাদের খিচুনি রোগ পারকিনসন রোগ বা অন্যান্য কোন সমস্যা আছে।
- লোকাল এনেসথেসিয়া অতিরিক্ত শোষণের ফলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রভাব দেখা দিতে পারে। যা তোমার স্নায়বিক অবস্থাকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যায়।
- এলার্জির ইতিহাস আছে এমন ব্যক্তিঃ আপনার শরীরে যদি এলার্জি থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসকে আপনি চিকিৎসা নেওয়ার আগে অবশ্যই জানাতে হবে যে আপনার এলার্জির সমস্যা আছে কিনা। এলার্জির প্রতিক্রিয়া এড়াতে ভিন্ন ধরনের এনেসথেসিয়া ব্যবহার করা হয়।
- ডায়াবেটিস রোগীঃ এটি ব্যবহারের ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডাইবেটিস রোগীর জন্য রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
- অত্যন্ত বয়স্ক এবং ছোট্ট শিশুঃ এই দুটি বয়সের জন্য ওষুধের মেটাবলিজম ভিন্ন হতে পারে। প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এদের জন্য ডোজ সাবধানে নির্ধারণ করা হয়।
mtwahid নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url